
শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
সৈয়দপুরে মাছ গোশত কাঁচামাল সহ প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন একটু করে বাড়ার ফলে সব জিনিসই এখন ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। মূল্যবৃদ্ধির এই আগুনে পুড়ছে আপামর সাধারণ মানুষ। সব পণ্যেরই দাম প্রায় দ্বিগুণ হারে দাম বাড়ায় অনেকটা অসহায় নিম্ন মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ। এসব ক্রেতারা কিছু কম দামের আশায় এ দোকান ও দোকান ঘুরছে। কিন্তু তাতে কোন লাভ হচ্ছে না। দফায় দফায় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতা বাক বিতন্ডা হচ্ছে। এক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। সচেতন মহলের অভিযোগ মাঠ পর্যায়ে বাজার মনিটরিং কমিটির তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন। মনিটরিং কমিটি যদি কঠোর তদারকি না করে তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে। আসছে রমজানে প্রতিটি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির আশংকা আরও বাড়িয়ে দিবে।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন সরেজমিনে সৈয়দপুর পৌর আধুনিক সবজি বাজার, রেলওয়ে গেট বাজার, গোয়ালপাড়া সবজি বাজার, গোলাহাট, ক্যান্ট মার্কেট, আদানী মোড় ঘুরে দেখা গেছে কোন সবজিই প্রতি কেজি ৪০ টাকার নিচে নেই। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে গরুর গোশতের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০-৫০ টাকা। খাসি, মুরগী ও বিভিন্ন জাতের মাছের দামও উর্ধ্বমুখী। বাড়ার প্রতিযোগীতায় থেমে নেই পেঁয়াজের দাম। কেজিতে বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। গোশতের বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে গরুর গোশত ছিল ৫৬০/৫৮০ টাকা। শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকা কেজিতে। বিক্রেতারা কোনভাবেই কম নেয়নি এই দাম। বরং অনেকক্ষেত্রে আরও বেশি নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। খাসির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। গত সপ্তাহের ৭০০ টাকার খাসির গোশত এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীদের অজুহাত হাট ও খামারে গরু ও খাসির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক হারে। ফলে এর প্রভাব পড়েছে খুচরা পর্যায়ে। এদিকে হঠাৎ করে গরু ও খাসির গোশতের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রভাব পড়েছে মুরগিতে। সাধারণ ক্রেতারা গরু ও খাসির চাহিদা মুুুরগীতে পূরণের চেষ্টা করছেন। এ কারণে মুরগির চাহিদা বাড়ায় দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেখা গেছে এর আগে যে ব্রয়লার বিক্রি হতো ১৩০ কেজি টাকা দরে এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজিতে। লেয়ার ২২০ টাকার স্থলে ২৫০ টাকা, সোনালী মুরগি ২৩০-২৪০ টাকার স্থলে ২৬০ টাকা, দেশি মুরগি ৩৮০ টাকার স্থলে ৪১০-৪২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামালের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের শাক সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। করলা ১১০-১২০, বরবটি ৪০, টমেটো ২৫-৩০, গাজর ২০-২৫, মটরশুঁটি ৫০-৬০, ফুলকপি ২০-২৫, বাঁধাকপি ১০-১৫, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে মরিচ, রসুন ও আদার দাম স্থিতিশীল থাকলেও পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে কেজিতে ১০-১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৫০-৬০ টাকা হয়েছে।লাউ ৩০-৪০ টাকা পিস ও কাঁচাকলা ৩০ হালি চলছে।
খোলা বাজারে সয়াবিন ও পামওয়েলের দাম হু হু করে বাড়ছে। কয়েক দিন আগে খোলা সয়াবিন তেল ১৭০-১৭৫ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৮৫ টাকা লিটার। বোতলজাত সয়াবিন তেল ১ লিটার বিক্রি হয়েছে ১৮৫ টাকায়। এছাড়া মূল্য বৃদ্ধি হয়ে মসুর ডাল (দেশী) ১২৫ টাকা, চিনি ৮২ টাকা, আটা ৩৫ টাকা, বুটের ডাল ৮০ টাকা, লবণ ৩২ টাকা এবং বিভিন্ন প্রকারের মোটা চাল ৪৫ থেকে ৫৬ এবং চিকন চাল ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারেও দেখা গেছে একই চিত্র। ছোট বড় মাছ ২০০ টাকা কেজির নিচে মিলছে না। মাঝে মাঝে দেশী প্রজাতির মাছ বাজারে দেখা গেলেও কেজি ৪০০-৫০০ টাকার উপড়ে। সব মিলিয়ে শাক সবজি, মাছ গোশতের বাজারে জ্বলছে মূল্য বৃদ্ধির আগুন।
ক্রেতাদের সাথে কথা হলে তাদের অসহায়ত্বের বিষয়টি অকপটে জানান তারা। লোহানী নামে এক ব্যক্তি বলেন, বাজারে সবকিছুর দামই উর্ধ্বমুখী। কোন পণ্যেই হাত দেয়া যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে মূল্য বৃদ্ধিতে আগুন লেগেছে। আর ওই তাপেই পুড়ছে সাধারণ মানুষ। পৌর সবজী বাজারে মুকুল নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, দাম বাড়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ অসহায়। অনেকে পণ্যের লিস্ট কাটছাট করে স্বল্প পরিমাণে শাক সবজি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা আরও বলেন, বাজার মনিটরিং কমিটি থাকলেও তাদের কোন তৎপরতাই চোখে পড়েনা। তাদের উদাসিনতার কারণেই হু হু করে বাড়ছে পণ্যের মূল্য। ক্রেতাদের আশঙ্কা এখনই কঠোর তদারকি না করলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে। আর এর খেসারত দিতে হতে পারে আসন্ন পবিত্র রমজানে।