আলোচনা সভায় অংশ নেন টেলিযোগাযোগ খাতের নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তারা
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবায় গুণগত মানের সঙ্গে আপোস করবে না সরকার। সেবার মান খারাপ হলে সংশ্লিষ্ট সেবাদাতা অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ডাক ও টেলি যোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এবং রবির যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ফাইভ-জি প্রযুক্তি : সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলেটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এই ঘোষণা দেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের মহাসড়কের নাম ফাইভ-জি। ফাইভজি সেবা চালু করার জন্য দেশে যে পরিবেশ থাকা দরকার সেটি ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করা হয়েছে।‘
অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ফাইভ-জি সেবা ঘিরে টেলিযোগাযোগ খাতের সকল অংশীদারকে নিয়ে এ আয়োজন সত্যিই সময়োপযোগী। ফাইভ-জির ব্যবসায়িক দিকের সাথে সাথে তা যেন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার বাস্তব সমস্যা সমাধান করতে পারে সেদিকেও আমাদের প্রত্যেককে সচেষ্ট হতে হবে। এটি করা সম্ভব হলেই ফাইভ-জি বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবায় গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মানসম্মত সেবা গ্রাহকদের মৌলিক অধিকার, এক্ষেত্রে আর ছাড় নেই। মানসম্মত সেবা নিশ্চিত হচ্ছে কি না তা মনিটর করা হবে এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার অনুষ্ঠানে ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘ফাইভ-জি চালুর বিষয়ে আমরা সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুত। এখন প্রয়োজন একটি সমন্বিত বাজার সমীক্ষা করা যাতে আমরা বুঝতে পারি কীভাবে আমরা ফাইভ-জি সেবা বাণিজ্যিকভাবে চালু করতে পারি, অ্যামটব (মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন) এখানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।‘
বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
তিনি বলেন, ‘ফাইভ-জি স্পেকট্রাম রোলআউট করতে হবে, আমাদের ৭০০ ও ৩.৫ স্পেকট্রাম রেডি আছে। নীতিমালা আছে, প্রয়োজনে সবার কল্যাণে নীতিমালা পরিবর্তন করা হবে। স্পেকট্রাম শেয়ার করার প্রয়োজন হলেও তার উদ্যোগ নেওয়া হবে। মানুষ কেন ফাইভ-জি নেবে, কতটুকু লাভবান হবে, এসব বিষয়ে সার্ভে করার প্রয়োজন রয়েছে। নেটওয়ার্কগুলো কোথায় কোথায় প্রয়োজন আছে, গ্রাহকরা ফাইভ-জি সেবায় কতটা উপকৃত হবেন তা স্টাডি করে বুঝতে হবে।‘
রবি ফাইভ-জি সেবার জন্য প্রস্তুত বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম।
তিনি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক কমিশনের দিকনির্দেশনায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। খাদ্য-বস্ত্রের পাশাপাশি এখন সবাই চায় কানেকটিভিটি। দ্রুত ফাইভ-জি কানেকটিভিটি দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বৈদেশিক মুদ্র্রায় বিপুল পরিমাণ সফটওয়্যার এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমদানি কমিয়ে স্বনির্ভর হতে আমাদের নিজস্ব মেধা কাজে লাগানোর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।‘
গ্রামীণফোনের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হোসেন সাদাত বলেন, ‘ফাইভ-জির শুরুতে আমাদের ইকোসিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে, টাওয়ারগুলোতে প্রচুর বিদ্যুৎ লাগবে। আমরা বিটিআরসির নির্দেশনায় কাজ করছি। ৭০টি দেশ ফাইভ-জি চালুর কাজ শুরু করেছে। আমাদেরও পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ-জি সেবা শুরু করতে হবে।’
বাংলালিংকের রেগুলেটরি অপারেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর মুখলেসুর রহমান বলেন, ‘অনেক কিছুই আমাদের ফাইভ-জি নিয়ে শিখতে হচ্ছে। সবাইকে একসাথে কাজ করে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফাইভ-জি শুরু চালু করতে হবে ।‘
রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে কানেক্ট করছি। আমরা চেষ্টা করছি ফাইভ-জি যখন আসবে ওই সংযোগ যেন কাজে লাগাতে পারি। সব অপারেটরের সাথে আমরা একসাথে কাজ করছি এবং অবকাঠামো শেয়ার করা হলে আমরা এগিয়ে যাব।‘
টেলিটকের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (ফাইভ-জি ) রেজাউল করিম রিজভী বলেন, ‘ফাইভ-জি নিয়ে এমন একটি আলোচনা সভা আয়োজন করার জন্য আমি টিআরএনবি ও রবিকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা ইতোমধ্যে ফাইভ-জি নিয়ে কাজ শুরু করেছি যার ধারাবাহিকতায় কিছুদিন আগে আমরা সফলভাবে ফাইভ-জি ট্রায়াল পরিচালনা করেছি। এই আলোচনার ফলে এই খাতে উন্নতির নতুন নতুন ধারা উদ্ভাবন করতে পারব, যা ফাইভ-জি বাস্তবায়নে আমাদের আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।‘
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) ইমদাদুল হক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
তিনি বলেন, ‘ফাইভ-জি প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক সহজলভ্য ও অ্যাকটিভ শেয়ারিং থাকতে হবে।‘
অনুষ্ঠানে অ্যামটব মহাসচিব এস এম ফরহাদসহ টেলিযোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল ফোন অপারেটর রবির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহযোগী অধ্যাপক ড. খালেদ মাহমুদ।