নীলফামারীতে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মত ঝরছে কুয়াশা। প্রচণ্ড হাঁড় কাঁপানো শীতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হচ্ছে।
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) নীলফামারীর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।রাত থেকে বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। গত এক সপ্তাহ থেকে এখানে তাপমাত্রা ৮ থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। সারাদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকছে; বিকেল হলেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে।
এ দিকে তীব্র শীতে শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। দেখা দিয়েছে শীত বস্ত্রের অভাব। নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ নতুন শীতবস্ত্র কিনতে না পেরে ছুটছেন পুরাতন শীতবস্ত্রের বাজারে।
কনকনে বাতাসের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরে পড়া ঘন কুয়াশা শীতকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে জেলার নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ। রাস্তার পাশে খড়কুটো জ্বালিয়ে অনেকেই শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। এদিকে ভোর থেকে ঘন কুয়াশার কারণে নীলফামারীর বিভিন্ন সড়কে ভারী যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
স্বপ্না নামে এক গৃহশ্রমিক বলেন, শীতে পানি দিয়ে কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়। পানির কাজ করলে মনে হয় বরফ ধরছি। এমন অবস্থায় কাজ করতে প্রচুর কষ্ট হয় আমাদের।
নির্মাণশ্রমিক বণিক সাহা বলেন, শীতের দিনে কাজে আসতে চান না শ্রমিকরা। শৈত্যপ্রবাহের কারণে হাত ঠান্ডায় অবশ হয়ে থাকে। ইট ও যন্ত্রপাতি ঠিকমতো হাত দিয়ে ধরা যায় না।’
দুখু মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, হঠাৎ করে এমন ঠান্ডা এবং কুয়াশায় মাঠে কাজ করতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। ঠান্ডার জন্য আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না।’
বাবু নামে এক রিকশাচালক বলেন, ঠান্ডায় মানুষ বাড়ি থেকে কম বের হয়। এতে যাত্রী পাওয়া যায় না। আর আয় না করতে পারলে আমরা খাব কী? এমন শীতে গাড়ি চালানো কষ্টসাধ্য। হাত অবশ হয়ে আসলে রিকশার চাকাও ঘোরানো যায় না।’
ডিমলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা জানান, গত কয়েকদিন থেকে নীলফামারীর তাপমাত্রা ওঠানামা করছে।শুক্রবার নীলফামারীর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সৈয়দপুর উপজেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা। শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সৈয়দপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের ২৭ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেটা অব্যাহত থাকতে পারে।
এ সময় সারা দেশে তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এমনটা নিশ্চিত করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। নওগাঁর বদলগাছীতে বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) দেশের সর্বনিম্ন ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
তবে সারা দেশে শনিবার (২১ জানুয়ারি) তাপমাত্রা সামান্য পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এছাড়া পরবর্তী ৫ দিন তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়, শুক্রবার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সকালের দিকে দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যান্য জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
আবহাওয়ার বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বাড়তি অংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।