আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়ায় জোরপূর্বক শ্রমের অপবাদ মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত প্রচেষ্টা নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, টিওয়াইটি ব্রায়ান ডি. ম্যাকফিটার, ইউএস পলিটিক্যাল কাউন্সেলর ড্যান সিন্ট্রন ও ফোর্সড লেবার পলিটিক্যাল অফিসার নাথান স্ট্যাকপুলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এ বৈঠক করেন দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী, দাতুক এম. সারাভানান।
এছাড়া বৃহস্পতিবার সকালে দামনসারায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার, রাজনৈতিক পরামর্শদাতা, টম শেফার্ড ও এশিয়া প্যাসিফিক এডুকেশন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের পরিচালক হুসনা হাশিমের একটি প্রতিনিধি দলের সাথেও বৈঠক করেন।
জোরপূর্বক শ্রমের সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনার জন্যই এই বৈঠক হয়েছে বলে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া বৈঠকে উপ-মুখ্য সচিব (ও), মুহম্মদ খায়ের রজমান মোহাম্মদ আনুয়ার, উপ-মুখ্য সচিব (ডিএন্ডএ), এ. মানিয়াম এবং লেবার ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক হাজি আসরি আব রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জবরদস্তি শ্রম, মানবপাচার, বিদেশি কর্মীর মানসম্পন্ন কাজ, বেতন, বাসস্থান, সেবা ও অভিবাসন ব্যয় নিয়ে কাজ করছে মালয়েশিয়ার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। গত ৩ জানুয়ারি রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে বৈশ্বিক রিপোর্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মালয়েশিয়ার শ্রম পরিস্থিতি এবং মানব পাচার বিষয়ে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে মর্মে দেশটির অবস্থানের অবনমন করে সর্বনিম্ন স্তরে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে যা বৈশ্বিক পণ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে মালয়েশিয়াকে চরম বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এরপর থেকে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডা নিজ নিজ দেশে মালয়েশিয়ায় উৎপাদিত পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
সে প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে রোড ম্যাপ ঘোষণা করে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও, বিভিন্ন দূতাবাস এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থার সমন্বয়ে ফোর্স লেবার এবং মানবপাচারের ঘটনা সম্পর্কে জানাতে নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করে প্রোগ্রাম নিয়েছে। যে কেউ ফোর্স লেবার এবং মানবপাচারের কোনো ঘটনা জানতে পারলে ফোন, ই-মেইলে বা সরাসরি জানানোর জন্য অনুরোধ করেছে।
এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় ওয়ার্ক ফর ওয়ার্কার নামে একটি অ্যাপ চালু করেছে যার মাধ্যমে কর্মী অভিযোগ করছে ও প্রতিকার পাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি কর্মীর মধ্যে কোনো পার্থক্য রাখা হয়নি।
সাম্প্রতিক কর্মস্থলের নিম্নমানের পরিবেশ, নিম্নমানের থাকার পরিবেশ, ওভার টাইম না দেওয়া, অতিরিক্ত খাটুনি এবং কর্মীর অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় সম্পর্কে গুরুতর তথ্য পাওয়ায় মালয়েশিয়ার সার্বিক মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা উত্তম নয় মর্মে অভিযোগ ওঠেছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়ন দারুণভাবে জড়িত, এ নিয়ে ভোক্তা দেশগুলো খুবই সজাগ।
এদিকে অতিরিক্ত শ্রম অভিবাসন ব্যয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নাম এসেছে যা কর্মীকে ঋণ গ্রহণ এবং তত প্রেক্ষিতে দাসত্বের শ্রম করতে বাধ্য করার প্রসঙ্গও রয়েছে। অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের বিষয়টি খোদ মালয়েশিয়া সরকার স্বীকার করে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়োগ স্থগিত করে। এর মধ্যেই জি-টু-জি প্লাসের চুক্তির মেয়াদ ২০২১ সালে উত্তীর্ণ হয়। ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ সালে পুনরায় মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ লোক নিয়োগের চুক্তি সম্পন্ন করে। কিন্তু অভিবাসন খরচ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন পরিমাণ উল্লেখ করা হয় নি।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় সাধারণ কর্মী হিসেবে গমনের ক্ষেত্রে একজন বাংলাদেশির জন্য যে অভিবাসন খরচ হবে তার মালয়েশিয়া অংশের সকল খরচ নিয়োগকর্তা বহন করবে। কিন্তু বাংলাদেশ প্রান্তে কত খরচ হবে এবং কে কে বহন করবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন ঘোষণা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ঘোষনা বা স্পষ্ট না করায় আদৌ বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ করবে কি না সে বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। অভিবাসন ব্যয় এখন জবরদস্তি শ্রম এবং মানব পাচারের ক্ষেত্রে জোরদার ইস্যু হয়ে আছে।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে মালয়েশিয়া সরকার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে সে আলোকে দ্রুত পণ্য উৎপাদন শুরু করতে প্রস্তুত বিভিন্ন সেক্টরের উৎপাদকরা। কিন্তু জোর জবরদস্তি শ্রম এবং মানব পাচারের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি না পেলে আমেরিকা, ইউরোপ, ব্রিটেন ও কানাডার মতো দেশে পণ্য বিক্রি করতে না পারার অভিযোগ রয়েই যাবে।
মালয়েশিয়া প্রবাস