রেজোওয়ান আলী বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি-
ফলন থাকে সারা বছর, এক গাছে লাউ ধরে ১০-১৫ বছর এরই ধারাবাহিকতায় দিনাজপুর বিরামপুর উপজেলার প্রায় ইউনিয়নে কৃষক গণ এমন ফসলের চাষ করে সফলতা অর্জন করেছে।
আজ (১৩ অক্টোবর) উপজেলার অর্ন্তরভূক্ত বিরামপুর পৌরসভা, খাঁনপুর, পলিপ্রয়োগপুর, দিওড়,মুকুন্দপুর,কাটলা,জোতবানি ও বিণাঈল ইউনিয়নে কৃষকেরা তাদের স্বল্প জায়গায় উক্ত ফলের চাষ করেছে।
এবিষয়ে কৃষকদের নিকট জানতে চাইলে তারা বলেন,আমাদের ফসলের তেমন জমি নাই বাড়ির পার্শ্বের সামান্য জায়গায় এই লাউয়ের গাছ লাগাই। এতে করে বাড়ির সবজি হিসাবে বেশ খাওয়া যায়। পাশাপাশি কিছু লাউ বাজারেও বিক্রয় করে বেশ লাভবান হওয়া যায়।
এবিষয়ে মুকুন্দপুর ইউনিয়নে পলি মাটিতে অনেকেই করেছে এই লাউ এর চাষ। এমন এক চাষির নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,লাউ গাছে পরিশ্রম অতি কম ও খরচ অনেক কম। অল্প সময়ের মধ্যে ফসল আসে এবং বাজারে এর চাহিদা অনেক। এতে করে অন্যান্য ফসলের চেয়ে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায়।
উল্লেখ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,২০২৩ সালে দূর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে সে জন্য আগে থেকে সকল কে প্রস্তুত থাকতে হবে। পাশাপাশি প্রত্যেকের যা জমি তা অতি সামান্য হলেও তাতে ফসলের চাষ করেন। যে যার জমির জায়গা ফাঁকা না রেখে তাতে যে কোন চাষে নিজেজে প্রস্তুত করেন বলে এমন মন্তব্য করেন।
নানান জাতের লাউয়ের মধ্যে অন্যতম একটি জাত হল সীতা জাতের লাউ। সীতা লাউ একটি বহুবর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ। একবার রোপণের পর প্রায় ১৫ বছর পর্যন্ত একই লতা থেকে ১২ মাস পাওয়া যাবে সবুজ লাউ।
বারি সীতা লাউ-১ জাতটি ২০১০ সালে অনুমোদন করা হয়। চারা লাগানর ৫-৬ মাস পর ফুল আসে। ৩০ দিন পর ফল সবজি হিসাবে খাওয়ার উপযোগী হয়। সারা বছর ফল দিতে থাকে। ৫-৭ বছরের একটি গাছ থেকে ২০০ টি ফল পাওয়া যাবে। গড়ে প্রতিটি ফলের ওজন ৭৫০ গ্রাম হয়। যেহেতু গাছ ১০-১৫ বছর বেঁচে থাকে এবং ফল দেয় তাই মজবুত মাচা তৈরি করতে হবে।
এ কারণেই লাউ এর সেরা জাত সীতা লাউ উর্বর দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত শীত এলএইউ চাষের জন্য সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত। শীত লাঊ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। সীতা লাউ বীজ বা শাখা কাটিং এর মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা যায়।
সীতা লাউ এর বীজ বপন ও চারা উৎপাদন এবং অনান্য: লাউ চাষের জন্য দুইভাবে বীজ বপন করা যায়। সরাসরি ক্ষেতে তৈরী মাদায় বীজ বপন করে অথবা পলিথিনের ব্যাগে চারা তৈরি করে। ৫০ ভাগ পচা গোবর অথবা জৈবসার সমপরিমাণ বেলে মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে পলিথিন ব্যাগের জন্য মাটি তৈরি করে নিতে হবে। পলিথিন ব্যাগের ব্যাস ৭.৫ সেন্টিমিটার ও উচ্চতা ১২-১৫ সেন্টিমিটার হবে।
পানি বের হওয়ার জন্য ব্যাগের তলায় দুই-তিনটি ছিদ্র করে দিতে হবে। অপর দিকে সরাসরি মাদায় বীজ বপন করতে হলে প্রথমে ৩০×৩০×৩০ সেন্টিমিটার পরিমাপের মাদা তৈরি করে সার প্রয়োগ করার পর প্রতি মাদায় চার-পাঁচটি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের ১০-১৫ দিন পর প্রতি মাদায় দু’টি করে সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।
বীজ বপনের গভীরতা-২.০-২.৫ সেন্টিমিটার হতে হবে। ৪-৫ দিনের মধ্যেই চারার অঙ্কুরোদ্গমন হবে। শীতকালীন লাউ চাষের জন্য সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে বীজ বপন করতে হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য আগস্টের মাঝামাঝি সময়েও বীজ বপন করা যায়। সীতা লাউ চাষের জন্য প্রতি মাদায় ২.২ মিটার দূরত্বে দু’টি করে সুস্থ ও সবল চারা রোপণ করতে হবে।
মাদার ওপরে মাচা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। রবি মওসুমে লাউ মাচাবিহীন অবস্থায়ও চাষ করা যায়। বিশেষ দ্রষ্টব্য: যেহেতু এই ফসলটি ১০-১৫ বছর বেঁচে থাকে এবং ফল দিতে থাকে সুতরাং মজবুত মাচা তৈরি,প্রুনিং ( ছাঁটাই) এবং ফলের আকৃতি ঠিক রাখতে কয়েকবার বোরন সার দিতে হবে। কিভাবে পরিচর্যা নিবেন-পানি সেচ আর বাউনি দেয়া লাউয়ের প্রধান পরিচর্যা।
লাউ ফসলে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। আগাম ফসলের জন্য শুষ্ক মৌসুমে জমি অনুযায়ী সেচ দিতে হবে। এর জন্য প্লাবন সেচ প্রয়োজন হয় বেশি। বাউনি বা মাচায় লাউ গাছ বাধাহীনভাবে যাতে বাইতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সমুদয় গোবর,টিএসপি,অর্ধেক এমওপি,বোরন, এবং এক পঞ্চমাংশ ইউরিয়া পিট তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে । বাকি এমওপি এবং ইউরিয়া ৪ কিস্তিতে বছরে প্রয়োগ করতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা কিভাবে করবেন-লাউগাছ প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে। তাই নিয়মিত গাছের গোড়ায় সেচ দেয়া,মাটির চটা ভেঙে দেয়া,বাউনি দেয়া ও গাছের গোড়ার শাখাগুলোও ভেঙে দেয়া বাঞ্ছনীয়। বারি লাউ-১-এর জন্য মাচা দেয়া ভালো। এ পোকা গাছের কচি ডগা বা পাতার রস শুষে খেয়ে গাছকে দুর্বল করে দেয়।
ফলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। মাছি পোকা লাউয়ের ওপর খোসার নিচে দিকে ডিম পারে। ডিম পাড়ার কয়েকদিনের মধ্যেই কীড়া রেব হয়ে আসে এবং লাউয়ের কচি অংশ খেয়ে ফেলে। এ রোগে আক্রমণ করলে গাছের পাতায় পাউডারের মতো আবরণ দেখতে পাওয়া যায়। মাটিতে রস থাকলে এ রোগ হয়। ডাউনি মিলউড রোগে গাছের পাতা বাদামি রঙ ধারণ করে। ছত্রাক আক্রমণে পাতা কুঁচকে যায়।
এ রোগের প্রতিকারের জন্য আপনার কাছের কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিন। পূর্ণবয়স্ক মাছিপোকা বাদামি বর্ণের গাঢ় হলুদ দাগযুক্ত হয়ে থাকে। স্ত্রী মাছি কচি ফলের গায়ে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে পোকার কিড়া আক্রান্ত ফলের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং লাউয়ের কচি অংশ খেয়ে নষ্ট করে।
ফলে আক্রান্ত লাউ পচে যায় এবং অকালে ঝরে যায়। বিষটোপ তৈরি করে এর আক্রমণ রোধ করা যায়।কীটনাশক ব্যবহার করে এ পোকা দমন করতে হলে গাছে কচি ফল দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ডিপটেরক্স-৮০ এসপি ১.০ গ্রাম অথবা ডিপটেরক্স-৫০ ইসি ১.৫ মিলিলিটার মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করতে হবে। অত্র উপজেলায় অনেক সফল চাষি এমন ফলের চাষে সফলতা অর্জন করেছেন বলে জানা যায়।