নিজস্ব প্রতিবেদক, নীলফামারী।
মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবেলাসহ বর্তমান বাজারে নির্মাণ সামগ্রীর লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে গত এক বছরে প্রতি টন রডের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। নির্মাণের অন্যতম উপকরণ সিমেন্টের দাম বেড়েছে প্রতি ব্যাগ ৯০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত। এরপরও উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রেখেছিলেন ঠিকাদাররা। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ পাথরের দাম বেড়েছে প্রায় ৭০শতাংশ। ১২০ টাকার পাথর গত মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকায়।
একের পর এক নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় থমকে গেছে বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন কাজ। লোকসান এড়াতে ঠিকাদাররা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন। ব্যক্তিগতভাবেও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবন নির্মাণে নিয়োজিতরা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দাম বৃদ্ধির প্রবণতা শুরু হয়। প্রথম দফায় সব কোম্পানির সিমেন্টের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। গত এক বছরে প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। দেখা গেছে, কোম্পানি ভেদে ৪২৫ টাকার সিমেন্ট বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রতি ব্যাগ ৫২০-৫৫০ টাকায়। রডেও একই অবস্থা। আগে যেই রড প্রতি টন ৫৫-৫৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমান সেই রডের দাম ৯০-৯২ হাজার টাকা। রড সিমেন্টের দাম বাড়লেও কিছুটা স্থিতিশীল ছিল পাথরের দাম। কিন্তু গত কয়েক মাস থেকে পাথরের দামও বাড়তে শুরু করে। ভোমরা ও বেনাপোল বন্দরে ১২০ টাকা ফুটের পাথর গত বুধবার বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকায়। সংকট থাকায় কেউ কেউ ২০০ টাকা ফুটেও পাথর কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীলফামারী গণপূর্ত বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর, সড়ক বিভাগ, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পৌরসভাসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রায় এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সড়ক বিভাগ ছাড়া অন্যান্য সংস্থার প্রতিটি কাজের অন্যতম উপকরণ রড, সিমেন্ট ও পাথর। দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক সংস্থার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন ঠিকাদাররা।
সূত্রটি জানায়, এম আর এম প্রকল্পের আওতায় সৈয়দপুর-নীলফামারী সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ চলছিল। পাথরের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং সংকটে অর্ধেক অবস্থায় পড়ে রয়েছে কাজ। ড্রেন নির্মাণের কাজও বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। এ ছাড়া অন্যান্য কাজের গতিও কমে গেছে।
শিক্ষা প্রকৌশলী বিভাগের অভিজ্ঞ ঠিকাদার শাহ আলমসহ আরো কয়েকজন টিকাদার বলেন, প্রতিটি নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। রড, সিমেন্টের পর পাথরের দাম বাড়ায় অনেকে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ শিডিউল অনুযায়ী পাথরের দাম ধরা আছে ১২০ টাকা। সেই পাথর যদি ২০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়, তাহলে তো পুঁজিই থাকবে না। একই অবস্থায় সিমেন্টেরও শিডিউলের দাম থেকে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। দাম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না নিলে সরকারি উন্নয়ন সহযোগীরা পথে বসে যাবে। অনেক সরকারি কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাবে।
মেসার্স ইসমাইল হোসেন এর প্রতিনিধি মোঃ নাজমুল হক (নুহু) বলেন, আমাদের নীলফামারীতে প্রায় ১০ কিলোমিটার কার্পেটিং ৩০০ মিটার রিজিট ৪৮ফিট সড়ক ভবনের কাজ চলমান । বৃষ্টির আগে শেষ করতে হবে তাই আমরা জোরে সোরে কাজ করাচ্ছি। এতে আমাদের আর্থিক ক্ষতি হলেও দেখার কেউ নেই। নির্ধারিত সময়ে কাজ করতে আমাদের ওপর চাপও রয়েছে।
নীলফামারী জেলার গাছবাড়ী থেকে ডোমার সড়কের বায়স্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান অয়েষ্টার কনস্ট্রাকশনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এ্যাডভাইজার আদেল মাহমুদ জুয়েল বলেন, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবেলাসহ বর্তমান বাজারে নির্মাণ সামগ্রীর লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি আমাদেরকে নিঃস্ব করে ফেলেছে। তাদের দাবী দেশে রড, সিমেন্ট, বিটুমিনসহ নির্মান সংশ্লীষ্ট সকল পণ্যের দাম লাগামহীন ভাবে বৃদ্ধি করায় তারা লোকসান গুনতে বসেছেন।