নারী কেবল পুরুষের অর্ধাঙ্গী নয়, একটি জাতিরও অর্ধাংশ
মো.শফিকুল ইসলাম,চট্টগ্রাম:
নারী এগিয়ে যাক আগামীর পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে। সৃষ্টির আদিকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত দেখা যায়, মানব সভ্যতার যা কিছু অগ্রগতি তার সবই নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে।
মহান সৃষ্টিকর্তা নারী ও পুরুষ সৃষ্টির মাধ্যমে তার সৃষ্টিকে পূর্ণতা দিয়েছেন। পুরুষ একা যেমন পরিপূর্ণ তা আনতে পারেনা তেমনি নারীও একা কোনো কাজে পরিপূর্ণতা পায়না। নারী ও পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। নারীকে একসময় কেবল ভোগ ও শারীরিক সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হতো। তাই তার পছন্দ, অপছন্দ, ইচ্ছা অনিচ্ছা এবং মেধার কোন মূল্যায়ন করা হতো না। ফলে নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতো।
পুরুষশাসিত সমাজে তারা ছিল অনাদর, অবহেলা ও নির্যাতনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত। কিন্তু বর্তমানে সেই ধারনা থেকে বেরিয়ে এসেছে সমাজ। মেধা ও যোগ্যতার বিচারে নারীও পুরুষের চাইতে কোনো অংশে কম নয়। তাইতো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, সেনাবাহিনী, বিমানবাহী, প্রধানমন্ত্রীসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র নারী তার যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। নারী আজ অন্তঃপুর বাসিনী নয়। গৃহলক্ষী নারী আজ হেঁসেলের কাজ সামলানো ও সন্তান জন্মদান ও লালন পালনের পাশাপাশি বহির্জগতের সকল কাজেও সুপ্রতিষ্ঠিত আপন মহিমায়।
সময় পাল্টেছে। বদলে গেছে সমাজ ও মানুষের মন মানসিকতা। তারপরও পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এখনো নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারেন না বেশির ভাগ মেয়ে। তাকে পরিবার কিংবা সমাজের ঠিক করে দেয়া পথেই জীবন চলতে হয়, অথচ প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে জীবনে তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়ার। পছন্দের পেশা বেছে নেয়ার অধিকার সবারই থাকা উচিত। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরা পেশা নির্ধারণ করার স্বাধীনতা পান না। তাকে পরিবার ও সমাজের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তেই জীবন চালাতে হয়।
এত কিছুর পরও সকল বাঁধাকে অতিক্রম করে নারী তাদের কর্মদক্ষতা, মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে এখন পরিবার, সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় যোগ দিয়ে প্রমাণ করছেন নিজের যোগ্যতা। নারী যখন নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিয়ে দক্ষতা অনুযায়ী উপযুক্ত পেশা নির্ধারণ করতে পারবেন, তখন আরো বেশি উন্নতি সাধন সম্ভব হবে।
একটি জাতির অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া কখনোই সম্ভব না। নারী কেবল পুরুষের অর্ধাঙ্গী নয় একটি জাতিরও অর্ধাংশ। সুতরাং নারীর প্রতি সবরকম সহিংসতা ও প্রতিবন্ধকতা বন্ধ করে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদা দিয়ে পুরুষের পাশাপাশি এগিয়ে যাবার মানসিকতায় তৈরি হোক আগামীর পৃথিবী।
লেখক- সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মোঃ শফিকুল ইসলাম