নীলফামারিতে ‘দুর্নীতি আর অনিয়মে’ শীর্ষে দুবাছুরী দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসা: পর্ব-১
দেশবাংলা ডেস্ক:
নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার দুবাছড়ি দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন ও মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও লক্ষ্মীচাপ ইউপি’র নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
দেশবাংলা খবরের অনুসন্ধানী ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব৷
দুবাছড়ি দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসা নীলফামারী জেলা শহর থেকে উত্তর দিকে ৮ কিমি দূরে দুবাছড়ি গ্রামে অবস্থিত। মাদ্রাসাটি ১৯৮৪ সালে স্থানীয়দের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়।
অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানে সরেজমিনে সদর উপজেলার দুবাছড়ি গ্রামের দুবাছড়ি দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসায় গেলে অনুসন্ধানী টিম সাংবাদিকদের দেখে জড়ো হতে থাকে এলাকাবাসী। এরপর এলাকাবাসীর মুখ থেকে প্রকাশ হতে থাকে একের পর এক বিভিন্ন অভিযোগ।
এসময়ে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মাদ্রাসা সুপার আব্দুল মোমেন ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ
দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এমনকি মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমিনুর রহমানের সহায়তায় সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুল মোমেন নিয়োগের আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন সৃষ্ট ও শূন্য পদে আবেদনকারীদের কাছ থেকে
মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রতিবেদক কে নিশ্চিত করেন এলাকাবাসী।
অন্যদিকে কোনো আইনি কারণ ছাড়াই শাহানা নামের একজন আবেদনকারীর আবেদন প্রত্যাখ্যান করায় সুপার আব্দুল মোমেন ও সভাপতি আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে উত্তেজনা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে কথা হয় শাহানা বেগম নামে এক স্থানীয় আবেদনকারীর সাথে তিনি বলেন, “আমি সব নিয়ম-কানুন মেনে এমএলএসএস (আয়া) পদের জন্য দুবাছড়ি দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসার সুপার বরাবরে আবেদন করেছি, কিন্তু সুপার আবদুল মোমেন কোনো কারণ ছাড়াই আমার আবেদন পত্রটি প্রত্যাখ্যান করেছেন ”। তিনি আরো বলেন, “আমি একজন বিধবা মহিলা এবং আমার পরিবারের তিন সন্তানদের নিয়ে অনেকটা পরিশ্রম করে সংসার চালাচ্ছি। যদিও লোকমুখে শুনেছি মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মোমেন এবং মাদ্রাসার সভাপতি আমিনুর রহমান ওই আয়াপদসহ বিভিন্ন সৃষ্ট পদের বিপরীতে নিয়োগ প্রদানের আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন আবেদনকারীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা গ্রহণ করেছেন। হয়তো সেকারণেই সুপার আবদুল মোমেন কোনো কারণ ছাড়াই আমার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন”।
* আবেদনকারীর সাথে একটি গোপনে লিখিত চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য।
* সুপার আব্দুল মোমেনের বিরুদ্ধে আদালতে জাল সার্টিফিকেট মামলাসহ দুটি ভিন্ন মামলা বিচারাধীন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের অভিযোগ করে বলেন, “মাদ্রাসা সুপার আব্দুল মোমেন স্থানীয় চেয়ারম্যান আমিনুর রহমানের সহায়তায় গত কয়েক বছর ধরে তার নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন। সুপার আব্দুল মোমেন ও চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান যৌথভাবে নিয়োগের জন্য বিভিন্ন আবেদনকারীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। এমনকি সুপার আব্দুল মোমেন সভাপতি আমিনুর রহমানের উপস্থিতিতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সিরাজুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির সাথে লিখিত চুক্তি করেছেন।
তিনি আরো বলেন, “মাদ্রাসা সুপার আব্দুল মোমেন ও নতুন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমিনুর রহমান গত কয়েক বছর ধরে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে যেনতেন ভাবে মাদ্রাসাটি পরিচালনা করছেন। এমনকি, সুপার আব্দুল মোমেন ও সভাপতি আমিনুর রহমান এর সহায়তায় অযোগ্য ও মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দিয়ে নিয়োগ বোর্ড গঠন করেছেন, যদিও সুপার আব্দুল মোমেন নিজেই সংখ্যালঘুদের ঘর পোড়ানো মামলার একজন প্রধান আসামি”।
অভিযোগের বিষয়ে দুবাছড়ি দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউপি’র চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, “শাহনার আবেদন গ্রহণের জন্য আমি সুপার আবদুল মোমেনের সঙ্গে কথা বলেছি”। কেন শাহানার আবেদন গ্রহণ করা হয়নি?সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমি জানি না”।
এদিকে, দুবাছড়ি দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মোমেন টাকা নিয়ে নিয়োগের জন্য লিখিত চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি স্বীকার করেছেন”।
জেলা শিক্ষা অফিসার (ডিইও) নীলফামারী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, “এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে” তবে, মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতি কর্তৃক দুর্নীতি, অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মোমেন এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলাসহ বিভিন্ন মামলা নিয়ে পরবর্তী অনুসন্ধান পর্ব-২ তে চোখ রাখুন৷