মোহাম্মদ জুবাইর চট্টগ্রাম।
অবৈধভাবে তৈরীকৃত বিপুল পরিমাণ জাল টাকা, জাল টাকা তৈরীর সরঞ্জামাদিসহ সিন্ডিকেটের মূলহোতা সাইফুদ্দিন ও তার ৩ সহযোগীকে কুতুবদিয়া থেকে আটক করেছে র্যাব-৭ চট্টগ্রাম।
গত কয়েক দিন যাবৎ র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বরাবর অভিযোগ গৃহিত হয় যে, কতিপয় প্রতারক চক্র দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চল বেছে নিয়ে বাংলাদেশী জাল টাকা তৈরী করে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় আসল টাকা বলে ছড়িয়ে দিয়ে প্রতারনা করে আসছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম উল্লেখিত জাল নোট তৈরীর সাথে জড়িত প্রতারক চক্রকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত শুরু করে।
এরই প্রেক্ষিতে গত ২৭ মার্চ র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া থানাধীন কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদ গেইটের বিপরীতে মঞ্জুর কমপ্লেক্সের নিচ তলায় একটি কম্পিউটারের দোকানের ভিতর সংঘবদ্ধ একটি অপরাধ চক্র বাংলাদেশী জাল নোট তৈরী করছে এবং এই চক্রটি ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সু-কৌশলে জাল টাকাগুলো বাজারে ছেড়ে ব্যাপক প্রতারনা করে আসছে।
উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে ২৭ মার্চ বিকেল ৫.১৫ ঘটিকায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ ছাইফুদ্দীন আহাম্মদ মিজান (২৫), পিতা-মোঃ শহীদুল্লাহ, ০২। সাইফুল ইসলাম (২৪), পিতা-ওমর আলী, ৩। মোঃ মিসবাহ্ উদ্দিন (৩২) এবং ৪। মোঃ জিয়াউদ্দিন (২০), উভয়ের পিতা-মোঃ শহীদুল্লাহকে ঘটনাস্থল থেকে অবৈধ জাল নোট প্রস্তুত করা অবস্থায় আটক করে।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে সকলেই অকপটে স্বীকার করে যে, তারা সংঘবদ্ধ একটি জাল টাকা প্রস্তুতকারক চক্রের সাথে জড়িত মর্মে তাদের হেফাজতে থাকা বিপুল পরিমান বাংলাদেশী জাল নোট প্রস্তুতের কাজে ব্যবহৃত থিংকপ্যাড, ল্যাপটপ, নোটপ্যাড, এলইডি মনিটর, কালার প্রিন্টার, ফটোকপি প্রিন্টার ও অন্যান্য আরও অনেক সরঞ্জামাদি এবং ১০০০ টাকার জাল নোট সম্বলিত ১৬ লক্ষ টাকা উদ্ধারসহ আসামীদের গ্রেফতার করা হয়।
ঘটনা সুত্রে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা সবাই একটি সংগঠিত জাল নোট তৈরি সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। এই সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ অসৎ উপায় অবলম্বন করে সকলের অগোচরে ও শহর এলাকায় বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অধিক তৎপর থাকায় তারা নিভৃত একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে কুতুবদিয়া নামক স্থানটিকে জাল টাকা ছাপানোর জন্য নির্বাচন করেছে।
ধৃত ০১ নং আসামী মোঃ ছাইফুদ্দীন আহাম্মদ মিজান এই অবৈধ জাল নোট সিন্ডিকেটের মূলহোতা ও ০২ নং আসামী সাইফুল ইসলাম কম্পিউটার বা ল্যাপটপে জাল টাকা গুলো প্রস্তুত করে কালার প্রিন্টারে প্রিন্ট করতো, ০৩ নং আসামী মিসবাহ্ উদ্দিন জাল টাকাগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় আসল টাকা হিসেবে তাদের চক্রের নির্ধারিত লোকের মাধ্যমে চালানোর ব্যবস্থা গ্রহন করতো এবং ০৪ নং আসামী মোঃ জিয়াউদ্দিন জাল টাকা প্রস্তুতকালীন সময়ে বর্ণিত স্থানে দোকানের দরজায় পাহাড়ায় নিয়োজিত থাকতো যাতে কেউ তাদের এই অবৈধ জাল টাকা তৈরীর কাজ সম্পর্কে জানতে না পারে। টাকা ছাপানোর পর তাদের চক্রের নির্ধারিত লোকের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জাল টাকা গুলোকে সু-কৌশলে চালানো হতো।
উল্লেখ্য যে, আসন্ন রমজান ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে মানুষের ক্রয়-বিক্রয় পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগে তাদের প্রস্তুতকৃত জাল টাকা গুলো মানুষের মাঝে আসল টাকা হিসেবে চালিয়ে জনগণকে ফাঁকি দিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনই ছিলো তাদের মূললক্ষ্য।
এছাড়াও আরো জানা যায়, তারা এই জাল টাকা ব্যবহার করে মায়ানমার থেকে অবৈধ পথে মাদকদ্রব্য এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করতো বলে অকপটে স্বীকার করে।গ্রেফতারকৃত আসামী এবং উদ্ধারকৃত আলামত সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।