শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ব্যয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাজার সদাই করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে না গরীব ও নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষ। সেজন্য নিরুপায় হয়ে লজ্জা ভুলে পণ্য কিনতে গরীবের লাইনে দাঁড়িয়েছেন মধ্যবিত্তরাও।
সকলেই ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ট্রাকে পণ্য কিনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র দেখ গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন দেড় শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মার্জিত পোশাকের নারী-পুরুষকে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কথা বলে জানা গেছে, তারা মধ্যবিত্ত পরিবারের।
এমনই এক দৃশ্য চোখে পড়ে সৈয়দপুর শহরের স্মৃতি অম্লান চত্বর সংলগ্ন টিসিবি’র ট্রাকের সামনে। এখানে উপজেলা আওয়ামীলীগের দুইজন উচ্চ পদস্থ নেতাকেও দেখা গেছে পন্য নিতে। একজন হলেন ৩ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (তথাকথিত সাংবাদিক) এবং অন্যজন সাংষ্কৃতিক সম্পাদক।
তাঁরা পদপদবী ভুলে লাইনে দাড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনলেন। তবে সংবাদকর্মীদের দেখে পন্য নিয়েই দ্রুত সটকে পড়েন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাদের নামে কোন কার্ড ইস্যু করা হয়নি। তাই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে তাঁরা কিভাবে টিসিবি’র পন্য নিলেন।
টিসিবি’র ট্রাকে নিয়োজিত কর্মীসূত্রে জানা যায়, কার্ড ছাড়া পন্য কেনার কোন সুযোগ নেই। তবে কার্ডে যেহেতু সুবিধাভোগীর ছবি সংযুক্ত করা হয়নি। সেই সুযোগে অনেকে অন্য কারও কার্ড কিনে নিয়েছে বা কার্ড প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অবৈধভাবে নিজ নামে কার্ড করিয়ে নিয়েছে।
এখানে অনিয়ম বা দূর্নীতি করে থাকলে তারাই করেছে। এতে আমাদের কোন হাত নেই। তাছাড়া কার্ড যাচাই করার দায়িত্ব বা ক্ষমতাও আমাদের কে দেয়া হয়নি। তাই ধারনা করা হচ্ছে তাঁরা অন্যের নামের কার্ড দিয়ে কম দামে পন্য কেনার সুবিধা হাতিয়ে নিয়েছেন।
টিসিবি’র পণ্য বিক্রয়ের প্রথম ধাপে ৪৬০ টাকা প্যাকেজে ২লিটার তেল, ২ কেজি চিনি ও ২ কেজি মুসুর ডাল পেয়ে খুশী উপকারভোগীরা। তিনটি পণ্য সাশ্রয়ীদামে পেয়ে অন্যান্য পণ্য ক্রয়ে কিছুটা হলেও সুবিধা পাচ্ছে।
সেই সুবিধা হাইজ্যাক করে নিচ্ছেন সরকারী দলের বিত্তশালী নেতাসহ জনপ্রতিনিধিদের সাঙ্গপাঙ্গ ও অনেক সামর্থ্যবান লোকজন। এতে প্রকৃত অসহায় ভুক্তভোগী মানুষেরা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, টিসিবির ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে হবে কোনো দিনও ভাবিনি। দোকান থেকে যা আয় হতো, তাতে ভালোভাবেই সংসার চলে যেত। কিন্তু এখন কোনোভাবেই আর সংসার চালাতে পারছিনা। এখন প্রতিটি পণ্যের দামই নাগালের বাইরে। তাই লজ্জা লাগলেও লাইনে দাঁড়িয়েছি।
উপকারভোগী বিকাশ চন্দ্র রায় বলেন, আমরা কারো কাছে হাত পাতি খাবার পাই না। দিন আনি দিন খাই। কাউন্সিলর কার্ড দিছে এই কার্ড দিয়া এইলা পণ্য কিনছু। এতে করি হামার বাকি জিনিসপাতি কেনার জন্য টাকা বাচিছে।
সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান জানান, আমরা স্বচ্ছ বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপকারভোগী নির্বাচিত করেছি। উপকারভোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সরকারি যে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সে অনুযায়ি উপকারভোগীর তালিকা করেছি।
কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড়া টিসিবির পণ্য হাতে নিয়ে মানুষ বাড়ি ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করলেও আওয়ামীলীগের উল্লেখিত দুই নেতা কিভাবে টিসিবি’র পন্য নিলেন এমন প্রশ্নের তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।